সাভার-আশুলিয়ার অন্যতম সৌন্দর্যময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
সাভার-আশুলিয়ার অন্যতম সৌন্দর্যময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

পজেটিভ বাংলাদেশ

 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের একমাত্র পাবলিক আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা শহরের মুঘল আমলের নাম ‘জাহাঙ্গীরনগর’ থেকেই ১৯৭০ সালে ‘জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশে মুসলিম শব্দটি কেটে এর নাম রাখা হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ৬৯৭.৫৬ একর জায়গার উপর ঘন সবুজ গাছ পালায় আবৃত বন্ধুর ও সমতল ভূমিতে স্থাপিত বিশ্ববিদ্যালয়ের লাল ইটের অবকাঠামোগুলো সহজেই দৃষ্টি কেড়ে নেয় সকলের। বর্তমানে আরো ৬ টি নতুন হল যুক্ত হয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে।

 

১৯৭১ সালের ৪ জানুয়ারি স্নাতক পর্যায়ে প্রথম ক্লাস শুরু হলেও ১২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর রিয়ার এডমিরাল এস.এম আহসান। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রথমে মাত্র ৪টি বিভাগ ২১ জন শিক্ষক আর ১৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও সময়ের পরিবর্তনে এখন ৬টি অনুষদের অধীনে ৩৪টি বিভাগ ও ২ টি ইন্সটিটিউটে সাত'শ শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে। 

 

১৯৭০ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর তারিখে অধ্যাপক ডঃ মফিজউদ্দিন আহমদ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভিসি হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন প্রখ্যাত কবি সৈয়দ আলী আহসান, লোকসাহিত্যবিদ মজহারুল ইসলাম, লেখক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, আ ফ ম কামালউদ্দিন, আমিরুল ইসলাম চৌধুরী, অর্থনীতিবিদ আব্দুল বায়েস, আলাউদ্দিন আহমেদ, খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমান, ড. ফারজানা  ইসলাম।

 

এ ছাড়া দেশের খ্যাতনামা ব্যক্তিরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। এদের মধ্যে অধ্যাপক সুনীল কুমার মুখোপাধ্যায়, লেখক হায়াত্ মামুদ, লেখক হুমায়ুন আজাদ, নাট্যকার সেলিম আল দীন, কবি মোহাম্মদ রফিক (সদ্য অবসরপ্রাপ্ত), অধ্যাপক মুস্তাফা নূরুল ইসলাম, আবু রুশদ মতিন উদ্দিন, রাষ্ট্র বিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী, ইতিহাসবিদ বজলুর রহমান খান, অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আনু মুহাম্মদ প্রমুখ।

 

১৯৭০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলেও সম্পূর্ণরূপে এর কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৭২ সালে। মুক্তিযুদ্ধের পরে পুরোদমে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। ক্রমে বিভাগের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বাংলাদেশের প্রথম নৃবিজ্ঞান ও ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাংলাদেশের একমাত্র প্রত্নতত্ত্ব বিভাগও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। শুরুতে দুইটি অনুষদ নিয়ে যাত্রা করলেও পরের বছর কলা ও মানবিক অনুষদ খোলা হয়। আইন অনুষদের অধীন আইন ও বিচার বিভাগ ২০১১ সালে পথচলা শুরু করে। ২০১৫ সালে আইন ও বিচার বিভাগের ১ম ব্যাচ এলএল.বি সম্পন্ন করে। বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউট ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে কার্যক্রম শুরু করে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অনুষদ সংখ্যা ৬ টি।

 

মহুয়া আর চন্দ্র মল্লিকার সৌরভে সুরভিত এ ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অন্যান্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে পরিপূর্ণ।  এই ক্যাম্পাসে রয়েছে অনেকগুলো ছোট বড় লেক যেখানে প্রতিবছর শীতের সময় অসংখ্য অতিথি পাখির সমাগম ঘটে।  লাল, সাদা ফুটন্ত পদ্মফুলের বিচিত্র সৌন্দর্য আর অতিথি পাখির কলরব এই ক্যাম্পাসকে দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় একটি পর্যটন এলাকায় পরিণত  হয়েছে। 

 

তাছাড়া ষড় ঋতুর এদেশে ঋতু পরিবর্তনে ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সকলকে আকৃষ্ট করে। প্রজাপতির সংরক্ষণ ও প্রজনন বৃদ্ধির জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে ‘প্রজাপতি পার্ক’। প্রতিবছর নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয় 'প্রজাপতি মেলা'। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী নামেও পরিচিত।

 

এছাড়া  বাংলাদেশের উচ্চতম শহীদ মিনার। স্থপতি রবিউল হুসাইনের তত্ত্বাবধানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের সম্মুখে ১৯৫২ সালের ভাষা-আন্দোলনের ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক হিসাবে ৫২ ফুট ব্যাস ও ৭১ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু শহীদ মিনারটি অবস্থিত। ৮টি সিঁড়ি ও ৩টি স্তম্ভ বিশিষ্ট; দৃঢ়তার প্রতীক ত্রিভুজ আকৃতির ঋজু কাঠামোটিতে বাংলাদেশ ও দেশের মানুষের জন্য মহান বীর শহীদ-গণের আত্মত্যাগের মহিমা বিধৃত হয়েছে। 

 

গ্রন্থাগারের সামনে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য সংশপ্তক । এই ভাস্কর্যে এক পা ও এক হাত হারিয়েও এক সংশপ্তক মুক্তিযোদ্ধা বিজয়ের হাতিয়ার উর্ধ্বে তুলে ধরেছে। ‘অমর একুশ’: সমাজবিজ্ঞান ভবনের সামনে এবং ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সাথেই রয়েছে ভাষা আন্দোলনের স্মরণে ভাস্কর্য অমর একুশ ।

 

এছাড়া, ক্যাম্পাসে রয়েছে ছোট বড় প্রায় ৩৫টি খাবার এর দোকান। যেখানে অল্প খরচে সুস্বাদু  ভাজি-ভর্তা পাওয়া যায়।  শীতকালে হাঁসের মাংস খেতে ঢাকা শহরের নানা প্রান্ত থেকে ভীড় করেন মানুষ।

 

বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য মো. নূরুল আলম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাঁকে এই পদে নিয়োগ দিয়েছেন।

 

লেখক,

আহমদ মাজহারুল হক আশরাফ
কলামিস্ট।


  • Tags

সর্বশেষ সংবাদ

এই বিভাগের আরও খবর