আশুলিয়ায় খোলা আকাশের নীচে অবৈধ সিসা কারখানা, বন্ধের দাবী এলাকাবাসির
আশুলিয়ায় খোলা আকাশের নীচে অবৈধ সিসা কারখানা, বন্ধের দাবী এলাকাবাসির

স্থানীয় সংবাদ

ঢাকার আশুলিয়ার কলতাসূতি নয়াবাড়ী এলাকায় সিসা গলানোর কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া ও ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ আশপাশের পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। ফলজ গাছ মরে শুকিয়ে গেছে। এসব রাসায়নিকের কারণে ওই এলাকায় বসবাসকারী মানুষ রয়েছেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। সিসা কারখানার নির্গত ধোঁয়ার কারণে এরই মধ্যে নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের। বেশ কয়েকটি গরুও এর মধ্যে মারা গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।তাই অতিদ্রুত বন্ধের দাবী জানান এলাকাবাসি। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউপির কলতাসুতি নয়াবাড়ী এলাকার স্বপনের বাড়ির ভেতরের জমি ভাড়া নিয়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের রুবেল নামের এক ব্যক্তি পুরাতন ব্যাটারির সিসা গলানোর কারখানা গড়ে তুলেছেন। তিন মাসেরও অধিক সময় ধরে আবাসিক এলাকার ভেতরে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র কিংবা অন্যান্য কাগজপত্র ছাড়াই নিয়মনীতি না মেনে কারখানাটি চালাচ্ছেন।

 

পরিত্যক্ত ব্যাটারি পুড়িয়ে বিশুদ্ধ সিসা বের করা হয় এ কারখানায়। উচ্চ তাপমাত্রায় ব্যাটারির পাত গলিয়ে সিসা ও লোহা আলাদা করা হয়। পরে ওই সিসা আবারো ব্যাটারি তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়।

 

জানা গেছে, উচ্চ তাপমাত্রায় পাত গলানোর সময় কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইডসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর যৌগ উৎপন্ন হয়। ধোঁয়ার মাধ্যমে এসব পদার্থ চার দিকে প্রায় এক বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। যা থেকে পরিবেশ, প্রতিবেশ, ফসল এবং মানবদেহের ক্ষতিসাধন করে থাকে। ফলে শ্বাষকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হন মানুষজন।

 

স্থানীয়রা জানান, বিভিন্ন এলাকা থেকে পুরাতন ব্যাটারি সংগ্রহ করে তা আগুনে গলিয়ে বিশুদ্ধ সিসা বের করা হয়। সিসা গলানোর গন্ধ ও ধোঁয়ায় আশপাশের লোকজন থাকতে পারছেন না। অনেকের শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া কারখানার আশপাশের বিভিন্ন ফলজ, বনজ গাছের পাতা শুকিয়ে গেছে এবং বেশ কয়েকটি কাঠাল গাছ মরে শুকিয়ে গেছে। এরই মধ্যে ওই এলাকার হুমায়ুনের চারটি, ইদ্রিসের একটি এবং আব্দুর রাজ্জাকের তিনটি গরু মারা যায়। প্রতিবাদে এবং কারখানা বন্ধের দাবী জানিয়ে এলাকাবাসি গেল বৃহস্পতিবার কারখানাটির সামনে বিক্ষোভ করে।একে এলাকার নারী পুরুষ অংশ নেন। 

 

স্থানীয় আরো বেশ কয়েকজন জানান, সিসা গলানো কারখানার কারণে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে এ এলাকার অনেকেই হাসপাতালে পর্যন্ত ভর্তি হতে হয়েছিল। কিন্তু হয়ত তারা বুঝতেই পারেনি যে সিসা গলানোর নির্গত ধোঁয়া থেকে তাদের শ্বাসকষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি গরু মারা গেছে।

 

বাংলাদেশ কোরিয়া মৈত্রী হাসপাতালের চিকিৎসক ডা: সফিক বলেন, সিসা উচ্চ তাপমাত্রায় গলানোর সময় সহযোগী হিসেবে কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড ও সালফার ডাই-অক্সাইডসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর যৌগ উৎপন্ন হয়। এসব রাসায়নিকের সংস্পর্শে এলে অ্যাজমা, চোখের রোগ, শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ ও ক্যান্সারের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

 

সরেজমিনে ওই কারখানায় গিয়ে কর্মরত শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরের বিভিন্ন স্থান থেকে পুরানো ড্রাইসেল ব্যাটারি ও সিসাযুক্ত দ্রব্য সংগ্রহ করা হয়। পরে সেগুলো কারখানায় এনে পুড়িয়ে প্রথমে সিসা বের করা হয়। পরে চুলায় দিয়ে ঢালাই করা হয় এবং নতুন ব্যাটারিতে ব্যবহার উপযোগী করা হয়। পরে সাভার ও ঢাকা সহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রির জন্য সরবরাহ করা হয়।

 

এব্যাপারে কারখানার মালিক রুবেলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এব্যাপারে কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

 

এ ব্যাপারে ঢাকা কলেজের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আসলাম হোসেন বলেন, খোলা জায়গায় ব্যাটারি গলানো হলে ব্যাটারির রাসায়নিক আলোক রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে বায়ুতে গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃস্বরণ করে এবং বায়ু দূষণ হয়। সেই সাথে বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হয়ে উঠে। এ ছাড়া গলিত ব্যাটারি থেকে যে ধাতু আসে যেমন, লেড, ক্যাডমিয়াম ইত্যাদি বায়ু, মাটি ও পানির সাথে মিশে মানবদেহে প্রবেশ করে বিভিন্ন রোগবালাই সৃষ্টি করে। যেমন, স্মৃতি হ্রাস, ক্যান্সার ইত্যাদি। এর ফলে বিশেষ করে শিশুরা বেশি ঝুঁকিতে থাকে। ব্যাটারি ব্যবহৃত বিভিন্ন এসিড যেমন সালফিউরিক এসিড সরাসরি পানি ও মাটিতে যায় এবং এতে বসবাসকারী বিভিন্ন প্রাণী মারা যায়, উদ্ভিদ ও গাছপালা মারা যায়। ফলে ওই অঞ্চলের ইকোসিস্টেম নষ্ট হয়ে যায়।

 

পরিবেশ দূষণকারী অবৈধ সিসা ঢালাই কারখানা দ্রুত বন্ধ করা না গেলে এ এলাকা মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে, আশঙ্কা স্থানীয়দের। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।


  • Tags

সর্বশেষ সংবাদ

এই বিভাগের আরও খবর