ইসলাম প্রথম ধর্ম যে দাসদের মানবিক অধিকারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করেছে

সাক্ষাৎকার

আজকাল কারও কারও মুখে এ প্রশ্ন শোনা যায়, ইসলাম মানবাধিকারের কথা বলে অথচ দাসত্বের অনুমতি কীভাবে দিল? প্রাচ্যবিদ লেখকদের ইসলামবিষয়ক লেখা পড়েই এমন প্রশ্নের অবতারণা করেন অনেকে। প্রকৃতপক্ষে ইসলামের বৈধকৃত দাসত্বকে জগতের অন্যান্য ধর্ম ও জাতির দাসত্বের অনুরূপ মনে করার কারণেই এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অথচ ইসলাম দাসদের যেসব অধিকার দান করেছে এবং সমাজে তাদের যে মর্যাদা দিয়েছে এরপর তারা কেবল নামেই দাস রয়ে গেছে। নতুবা তারা প্রকৃতপক্ষে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেছে।
প্রথমেই স্মরণ রাখতে হবে যে, দাসপ্রথা ইসলাম আবিষ্কার করেনি। বরং পূর্ব থেকেই সারা বিশ্বে চলমান একটা ব্যবস্থা ছিল। তো ইসলাম এসে এ ব্যবস্থার পূর্ণ সংস্কার সাধন করেছে। কাউকে দাসে পরিণত করার বিদ্যমান সবগুলো পথ বন্ধ করে দিয়ে, সংগতকারণে কেবল যুদ্ধবন্দিদের দাসে পরিণত করার পথ খোলা রেখেছে। তবে এক্ষেত্রেও দাসদের জন্য সমূহ মানবিক অধিকারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করেছে।
প্রকৃত সত্য এই যে, অনেক অবস্থায় বন্দিদের দাসে পরিণত করার চেয়ে উত্তম কোনো পথ থাকে না। কেননা দাসে পরিণত না করা হলে যৌক্তিক দিক দিয়ে তিন অবস্থাই সম্ভবপরÑ হয় হত্যা করা হবে, না হয় মুক্ত ছেড়ে দেয়া হবে, না হয় যাবজ্জীবন বন্দি করে রাখা হবে। প্রায়ই এ তিন অবস্থা উপযোগিতার পরিপন্থী হয়। কোনো কোনো বন্দি উন্নত প্রতিভার অধিকারী হয়ে থাকে, এ কারণে হত্যা করা সমীচীন হয় না। মুক্ত ছেড়ে দিলে অনেক ক্ষেত্রেই এমন আশঙ্কা থাকে যে, স্বদেশে পৌঁছে সে মুসলমানদের জন্য পুনরায় বিপদ হয়ে দাঁড়াবে। এখন এই দুই অবস্থাই অবশিষ্ট থাকে হয় তাকে যাবজ্জীবন বন্দি রেখে আজকালকার মতো কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপে আটক রাখা, না হয় তাকে দাসে পরিণত করে তার প্রতিভাকে কাজে লাগানো এবং তার মানবিক অধিকারগুলোও পুরোপুরি প্রদান করা। চিন্তা করলে প্রত্যেকেই বুঝতে পারে যে, এতদুভয়ের মধ্যে উত্তম ব্যবস্থা কোনটি।
দাসদের সম্পর্কে ইসলামের যে দৃষ্টিভঙ্গি তার পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টা বোঝা আরও সহজ। তাদের সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি নবীজি (সা.) নিম্নরূপ ভাষায় ব্যক্ত করেছেন, ‘তোমাদের দাসেরা তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাদের তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন। অতএব যার ভাই তার অধীন হয়, সে যেন তাকে তাই খাওয়ায় যা সে নিজে খায়, তাই পরিধান করায় যা সে নিজে পরিধান করে এবং তাকে যেন এমন কাজের ভার না দেয় যা তার জন্য অসহনীয় হয়। যদি এমন কাজের ভার দিতেই হয়, তবে যেন সে নিজেও তাকে সাহায্য করে। (বোখারি : ২৪০৭, মুসলিম : ১৬৬১)।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের দিক দিয়ে ইসলাম দাসদের যে মর্যাদা দান করেছে তা স্বাধীন ও মুক্ত মানুষের মর্যাদার প্রায় কাছাকাছি। সে মতে অন্যান্য জাতির বিপরীতে ইসলাম দাসদের শুধু বিবাহ করার অনুমতিই দেয়নি; বরং মালিকদের উদ্দেশ্যে বলেছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ণ, তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ (সূরা আন-নূর : ৩২)। হজরত আলী (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) এর পবিত্র মুখে যে কথাগুলো জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত উচ্চারিত হচ্ছিল এবং তার পর তিনি পরম প্রভুর সান্নিধ্যে চলে যান তা ছিল এই, ‘নামাজের প্রতি লক্ষ্য রাখো, নামাজের প্রতি লক্ষ্য রাখো। তোমাদের অধীনস্থ দাসদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো।’ (সুনানে আবু দাউদ : ৫১৫৬)। তা ছাড়া ইসলাম দাসদের শিক্ষাদীক্ষা অর্জনেরও যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা প্রদান করেছে। খলিফা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ানের আমলে ইসলামী সাম্রাজ্যের প্রায় সব প্রদেশেই জ্ঞান-গরিমায় যারা সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন তাদের অধিকাংশই ছিলেন দাসদের অন্তর্ভুক্ত।
 


  • Tags
https://youtu.be/uu2uh50iwPo?si=tz3o10sr3q963vDK
https://youtu.be/uu2uh50iwPo?si=tz3o10sr3q963vDK

সর্বশেষ সংবাদ

এই বিভাগের আরও খবর