প্রতিকী

অন্যান্য সংবাদ

এক লোক ছিলো, সে দীর্ঘদিন আল্লাহ কে ডাকার পর হঠাৎ তার মনে হলো,  আল্লাহ তার কথা শুনে না। সে হুদাই ডাকে তাকে। তাই সে আল্লাহ কে ডাকা বন্ধ করে দিলো। আর সে ভাবলো, এই যে আল্লাহ বলেন, তিনি সকল কে খাওয়ান পরান বাঁচান এটা যদি সত্যি হয়, তাহলে দেখি তিনি আমার কি করতে পারেন....? 

 

আজকে থেকে আমি কিছু খাবো না। এমনকি পানিও না । আর এমন জায়গায় চলে যাবো, যে কোন ঝামেলাও থাকবে না। ফলে বাঁচা মরার কোন কিছুই আমাকে ধরতে পারবে না....। পুরোটাই আমার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আমিই সব! 

 

তাই সে বাসা থেকে বের হয়ে জঙ্গলে চলে গেলো। একদিন চলে যাবার পরও, সে কিছু খেলো না। দুদিন চলে গেলো, তখনো সে কিছু খেলো না। আর মনে মনে তার বিস্বাস আরো দৃঢ হতে থাকলো, আল্লাহ আসলেই কিছু করতে পারেন নাই তাকে।"আল্লাহ" বলে কিছু নাই।

 

সে একসময়  ক্লান্ত হয়ে গাছের নিচে ঘুমিয়ে পরলো। হঠাতই সরোগোল শুনে তার ঘুম ভাঙ্গলো, সে দেখলো, কিছু জঙ্গলী মানুষ একটা হরিণ শিকার করে এনে আগুনে পুড়িয়ে খাবার জন্য রেড়ি করছে। আর তারা ইশ্বরের প্রর্থনায় নানা রকম গুণকীর্তন  করছে। এটা দেখে সে বিরক্ত হয়ে বললো,পাগলের দল যতসব, নিজে শিকার করে আনছে অথছো আল্লাহকে সরণ করছে। সে বিরক্ত হয়ে গাছের উপর উঠে বসলো। বাহ কত আনন্দ এখানে কেও আসবে।  আমি নিশিন্ত। আমিই মরে গিয়েও জিতবো।

 

একটু পরেই সে আবার ঘুমিযে পরলো। হঠাতই আবার সোরগোলে তার ঘুম ভাঙ্গলো। কি ব্যপার এতো কান্নাকাটি  কেন..? সে উপর থেকে দেখতে পেলো, একদল ডাকাত এই দিকে আসছে। জঙ্গলীরা সেটা বুঝতে পেরে দৌড়ঝাঁপ শুরু করছে..! হঠাতই সে পিছন ফিরে দেখলো একটি অজগরও তার দিকে আসছে তাকে খেতে...। এটা দেখে সেও ভয়ে চিতকার শুরু করে....!

 

তার এই চেঁচামেচি দেখে, জঙ্গলীরা খুশী হয়ে আবার লাফিয়ে ওঠলো..! ইশ্বরকে প্রর্থনা করে একটি তীর দিয়ে সাপটিকে বধ করলো। সাপটি নিচে পরে গেলে, তারা তুলে নিয়ে খুশী মনেই নিজেদের রান্না হরিণ ফেলে দৌড়ে পালিয়ে গেলো।  সে একটু শান্ত হলো।যাক সাপের খাদ্য হলাম না।


 লোকটি বেশ খুশী হলেন। সে নিজে নিজে ভাবতে লাগলো, যাক এখন পর্যন্ত সে জিতেই আছে।আল্লাহর কাছ থেকে! ঠিক তখনই ডাকাত দল হাজির হলো গাছের নিচে। পোড়া হরিণ রান্না দেখে বেশ খুশী হলো। আবার সন্দেহও হলো! তাই খেতে সাহস করলো না। তাদের মনে হলো, এই খাবারে বিষ আছে নিশ্চয়! তাই জঙ্গলীরা রেখে গেছে তাদের জন্য....। তাই তারা কে রান্না করছে, আর তাতে বিষ আছে কিনা তা জানার জন্য কাউ কে খোজ করছিলো।

 

ডাকাত দল দেখলো, গাছের উপর এক লোক বসা! ডাকাত সর্দার তাকে গাছ থেকে নামতে বললো, সে নামলো। বড় এক ছুরি তার গলায় ধরে বললো। " তুই খা আগে"!  লোকটি বললো, আমি তো আনি নি এটা সর্দার। রান্নাও করি নি। আর আমি খাবো না বলে পন করেছি..!

 

ডাকাত বললো, তুই না খেলে বুঝতে পারবো না এটাতে বিষ আছে কিনা! তোকে খেতেই হবে। তা নাহলে, তোর একটা একটা করে হাত পা কেটে ফেলবো। বেচার তখন নিরুপায়  হয়ে, হরিণের মাংস মুখে দিলো...। ডাকাত ও খুশী হলো। তারা বুঝলো, খাবারে বিষ নাই। আর সেও জঙ্গলী মানুষ না। তাই ডাকাত দল  মহা আনন্দে খাওয়া শুরু করলো।

 

লোকটি এবার মনের ভিতর তাকিয়ে বুঝে গেলো, আসলেই "আল্লাহ" সবাইকে খাওয়ান  পরান, বাঁচান তার হুকুম হলেই মানুষ মরে। সে দেখলো, জঙ্গলীরাও নিরাপত্তা পেলো। আবার সাথে করে খাবার পেলো। ডাকাত ও খাবার পেলো। আর সেও না চাইতেও খাবার পেলো। আল্লাহই সমস্ত বিশ্বের প্রভূপতিপালক।  তিনি খারাপ,  ভালো, পাপীতাপী  সবাইকেই খাওয়ান...।

 

সে হাসি মুখে, মনে পূর্ণ বিস্বাস নিয়ে আবার সমাজে চলে আসলো। আর এক আল্লাহর প্রতি বিস্বাসে পূর্ণজীবন যাপন শুরু করলো।

 

আহমদ মাজহারুল হক  আশরাফ-

লেখক, কলামিস্ট ও সাংবাদিক

 


  • Tags

সর্বশেষ সংবাদ

এই বিভাগের আরও খবর