মানুষের কষ্ট লাঘবে যা করা দরকার সরকার তাই করছে: প্রধানমন্ত্রী
ফাইল ছবি

রাজনীতি

দেশের মানুষ যাতে কষ্ট না পায় তার জন্য যা যা করা দরকার, সরকার করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক খাতে যে সংকট দেখা দিচ্ছে, তা মোকাবিলার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি খাতে কী অবস্থা, তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। মানুষের অবস্থা বিবেচনা করে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে।

জ্বালানি সংকট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে  মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) জাতীয় সংসদে আনা এক সাধারণ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ নেতা এসব কথা বলেন।


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতিতে অবস্থান কী, বিশ্বে প্রতি মুহূর্তে অর্থনীতির সূচকগুলোতে যে উঠানামা হচ্ছে, সেখানে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, তা গভীরভাবে পর্যালোচনা করেই সরকার ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।


কোভিড-১৯, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, জ্বালানি সংকট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ সাম্প্রতিক সমস্যায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ সংসদে আলোচনার মাধ্যমে জাতিকে জানাতে কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ বিধিতে সাধারণ প্রস্তাবটি আনেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক।

আলোচনার শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই বিরোধী দলের এ ধরনের একটি প্রস্তাব সংসদে গ্রহণ করা হয়েছে এবং তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর মুজিবুল হকের আনা প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করে জাতীয় সংসদ।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বৈশ্বিক পরিস্থিতিসহ দেশের অর্থনীতির চাকা গতিশীল রাখতে সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমার কাছে ক্ষমতা মানে দেশের মানুষের সেবা করা। লুটপাট, দুর্নীতি, নিজের ভাগ্য পরিবর্তন নয়।

তিনি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং নিষেধাজ্ঞার কারণে আমাদের বিপদে পড়তে হয়েছে। শুধু আমরা নই, উন্নত দেশগুলোও বিপদে পড়ে সাশ্রয়ী হচ্ছে। জার্মানি বলে দিয়েছে কেউ গরম পানি ব্যবহার করতে পারবে না। ব্রিটেনে তো আরও ভয়াবহ অবস্থা। তারা চিন্তায় পড়ে গেছে শীতকালে কী করবে। কারণ তখন তারা পানি গরম না করলে টিকতে পারবে না।

তিনি বলেন, চালসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার জন্য মানুষের কষ্ট হচ্ছে। সেটা আমি উপলব্ধি করি। আমি নিজেও এখন সব বাতি জ্বালাই না। আমরা সেখানে কিন্তু সাশ্রয় করি। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার পরিবর্তে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনেক কাজ করি। সেভাবে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। মানুষের কল্যাণ আমাদের কাছে সব থেকে বড়। মানুষের কষ্ট হলে অন্তত আমার মনে ব্যথা লাগে। কারণ আমার বাবা তো এদেশের মানুষের জন্য তার জীবনটি উৎসর্গ করেছেন।

সকলের সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, অসত্য তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের দাম অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাওয়া এবং রাশিয়ার ওপর ডলারের অবরোধসহ বিভিন্ন কারণে বাজারে যে ডলার সংকট হয়েছে তা উত্তরণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। তবে কিছু লোক মানুষের দুঃসময়ে নিজের ভাগ্য গড়তে চায়। অধিক মুনাফা অর্জন করতে চায়। তবে এর কঠোর মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি।

জ্বালানি খাতে সরকারের নানা পদক্ষেপ নিয়েও একটি অংশ সমালোচনা করে চলেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, অনেকে বলে কিছুই হয়নি। আসলে কিছু লোক আছে না কানে শোনে, না চোখ মেলে দেখে। যার জন্য শুধু মনে করে কিছুই হয়নি। কিছুই হয়নি। আমাদের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নজরদারি আছে।

সরকার রিটার্নের বিষয়টি চিন্তা করে প্রকল্প গ্রহণ করে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যত প্রকল্প নিয়েছি সেখানে অর্থনীতির গতিশীলতার দিকে নজর রেখে নিই। কোন প্রজেক্টে আমাদের রিটার্ন আসবে তার দিকে আগে নজর দিই। বিশাল একটা প্রস্তাব পেলাম আর সেখান থেকে মোটা কমিশন খাবো সেইজন্য প্রকল্পটি নিলাম—এরকম আমরা করি না। এটা কিন্তু জিয়ার আমলে করা হয়েছে। জেনারেল এরশাদের আমলে করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার আমলে করা হয়েছে। এরকম বহু প্রমাণ আমাদের আছে। আমরা দুর্নীতি করতে আসিনি। আমরা দেশের জন্য করি।

পদ্মা সেতুর টোল থেকে গত ৬০ দিনে ১৩৮ কোটি ৮৪ লাখ ৩ হাজার ৮৫০ টাকা আদায় হয়েছে বলে সরকার প্রধান জানান।

তিনি বলেন, সব বিবেচনা করে জ্বালানি তেল ও সারের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই পদক্ষেপ নিতে হবে। জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা কমানো হয়েছে, পাঁচ টাকা। যুদ্ধ শুরুর পরপর দাম বাড়ালে অনেক বেশি দাম বাড়াতে হতো। মানুষের কথা চিন্তা করে এটা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ২০০৯ সালে যখন সরকার গঠনের সময় রাজনীতি, অর্থনীতি সব ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি নাজুক ছিল। এখন বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাচ্ছে, এসময় করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী মন্দা দেখা দিলো। প্রবৃদ্ধি উন্নয়নের ধারায় ফিরিয়ে আসা শুরু যখন হলো, তখন এলো রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ। খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি, তেলের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে শুধু বাংলাদেশ নয়, সব দেশকেই সংকট মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমদানির ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ ব্যয় বেড়েছে। নিত্যপণ্য ভোজ্য তেল, জ্বালানি তেল, ডাল চিনিসহ অনেক জিনিস আমদানি করতে হয়। একই পরিমাণ পণ্য আমদানি করতে এখন আগের চেয়ে ৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ করতে হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, খাদ্যপণ্যের দাম বহুগুণ বেড়ে যাওয়ায় অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে।  আমেরিকা-ইউরোপেও এমন মূল্যস্ফীতি বেড়েছে যা আগে কেউ ধারণাও করতে পারেনি। নিজেরা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে নিজেরাই এখন বিপদে। ইউরো জোনে ৪০ বছরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ। ব্রাজিলে ১৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। জাপানেও মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। সেখানে আগে মূল্যস্ফীতি মাইনাসে ছিল। ইউরোপে গ্যাস, ইলেক্ট্রিসিটি এমনকি পানিও রেশনিং করা হচ্ছে। জাপানে, চীনে লোডশেডিং হচ্ছে।

রিজার্ভ নিয়ে হতাশ না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈদেশিক রিজার্ভে তিন মাসের আমদানি ব্যয় নির্বাহ করার টাকা থাকলে ঝুঁকিমুক্ত বিবেচনা করা হয়। দেশে পাঁচ–ছয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মত রিজার্ভ আছে। এখানে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। আমরা যত ঋণ নেই সময়মতো তা পরিশোধ করি। কখনও আমরা ডিফল্টার হইনি, হবোও না।

তিনি বলেন, তেলের দাম নিয়ে কথা উঠছে। ডিজেলের ২০২১ সালে গড় মূল্য ৮৩ দশমিক ৯৩ ডলার ব্যারেল। এখন ১৩২ দশমিক ৫৩ ডলার। এর চেয়ে বেশিও হয়েছিল। ইউরিয়া সারের দাম ৭৫ টাকা কেজি ক্রয়মূল্য। ভর্তুকি দিচ্ছি ব্যাপক হারে। ৫৩ টাকা ভর্তুকি দিচ্ছি। টিএসপি ৩৭টাকা ভর্তুকি দিচ্ছি। চিনির চাহিদা ২০ লাখ টন চাহিদা। উৎপাদন খুবই কম। চাহিদার ৯৬ ভাগ আমদানি করতে হয়। মসুর ডালও একই অবস্থা। ৬৫ শতাংশ আমদানি করতে হয়। এক বছর চিনি মসুর ডালের আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে ১৮ থেকে ২০ শতাংশ। চাল গম আটার দাম বেড়েছে ১০–১৫ শতাংশ।

সরকার সার্বিক পরিস্থিতি চিন্তা করে প্রতিটি পদক্ষেপ নিচ্ছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন,  আমরা নিজেরা গবেষণা করে ব্যবস্থা নিচ্ছি। কী কী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেই। নিজেদের ব্যবস্থা নিজেদের করতে হবে।

 

তথ্যসূত্র : বাংলা ট্রিবিউন


  • Tags

সর্বশেষ সংবাদ

এই বিভাগের আরও খবর